বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০

কিডনির প্রয়োজনীয়তাঃ


কিডনি মানব দেহের একটি  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সাধারণত মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে। কিডনি পেটের ভিতরে, পিঠের দিকে, মেরুদন্ডের দু পাশে কোমরে অবস্থিত। এটির আকৃতি অনেকটা শিমের মতন। কিডনি আমাদের শরীরের রক্ত পরিশোধন করে, শরীরে তরল ও ধাতবের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনি লোহিত রক্ত কনিকা তৈরিতে এবং হাড়ের সাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কিডনির রোগের লক্ষণ কিঃ

Ø   কিডনির রোগের লক্ষণ অনেক প্রকারের হয় আর তা রোগের প্রকার এবং গভীরতার উপর নির্ভর করে। সব থেকে বেশি দেখতে পাওয়া লক্ষণ গুলি হলো মুখমণ্ডল এর ফোলাভাব (বিশেষ করে সকালে), খুদামান্দা, বমিভাব, কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বলতা, মুত্রের পরিমান কমে যাওয়া, মুত্র ত্যাগের সময় জ্বলন বা অসুবিধা, মূত্রে রক্তের উপস্থিতি যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে এই জাতীয় লক্ষণ দেখা যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্ৰয়োজন।

Ø  কাদের কিডনির রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকেঃ

     যে কোনো মানুষেরই কিডনির রোগ হতে পারে। তথাপি যারা অনেক দিন ধরে উচ্চ রক্ত চাপ বা Diabetes এ ভুগছেন বা দীর্ঘ দিন ধরে যন্ত্রনা নিবারক ওষুধের সেবন করে চলেছেন তাদের কিডনির রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বংশগত কিডনির রোগ থাকলে বা মুত্র নালীর জন্মগত কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

Ø  কিডনি প্রতিস্থাপন এর প্রয়োজন কখন হয়ঃ


ক্রনিক কিডনি ডিসিজ এর রোগীদের কিডনির কার্য ক্ষমতা যখন ৮৫ থেকে ৯০ % কমে যায়, তখন কিডনি প্রতিস্থাপন এর প্রয়োজন হয়। এর  অর্থ হ', কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন কেবল সেই রোগীদের জন্যে যাদের  কিডনির কার্যক্ষমতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, যাকে মেডিকেলের পরিভাষায় বলা হয়  "এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ" (ESRD)

KIDNEY FUNCTION TESTS

NORMAL RANGE

RANGE INDICATIVE OF KIDNEY FAILURE

Serum Creatinine (SC)

1.2 – 1.4

 

Glomerular Filtration Rate(GFR)

90 & Above

<1 5    

Blood Urea Nitrogen(BUN)

7 to 20

 


 

     কখন ডায়ালিসিস এর দরকার হয়ঃ

যখন কিডনির কর্মক্ষমতা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কমে যায় (এন্ড স্টেজ কিডনি ডিসিজ- ESKD), কিডনি শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিকাশ করতে পারে না ফলে বমি-বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট বা শরীর ফুলতে দেখা যায়. এমতাবস্থায় ডায়ালিসিসএর প্রয়োজন হয়. একজন ক্রনিক কিডনি ডিসিজএর রোগীর সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ৮ মি. গ্রা. প্রতি ডে. লি. বা তার বেশি হয় তখন ডায়ালিসিসএর প্রয়োজন হয়।

   কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সম্পর্কে আপনি নিজেকে কি ভাবে প্রস্তুত করবেন ?

আমাদের  কিডনির কার্যক্ষমতা যখন পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে , সেই ক্ষেত্রে  কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যাতিত বিকল্প আর কেনো রাস্তা আমাদের হাতে থাকে না। তখন উপযুক্ত  (কিডনি বিশেষজ্ঞ / ইউরোলজিস্ট) পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি এবং কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে যাওয়ার আগে  ক্ষতিগ্রস্থ কিডনি পুনরুদ্ধার করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রচেষ্টা কিডনি বিশেষজ্ঞের সহিত করে নেওয়া উচিত।
এরপর দেখতে হবে রোগী ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য শারীরিক ভাবে কতটা সুস্থ আছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি রোগীর হার্ট বা অন্যান্য কোনো রোগ থাকে  ডায়ালাইসিস চলাকালীন, তখন অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের ট্রান্সপ্লান্ট করতে দেওয়া হয় না।
রোগী এবং তার পরিবারের সদস্যরা যখন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তারপরেই নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পর্কের  বিষয়গুলি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া হয় :

১. কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্যে একটি হাসপাতাল নির্বাচন করুন, যেখানে সর্বাধিক সাফল্যের হার ভালো। বিভিন্ন চিকিৎসকের সাথে হাসপাতাল সম্পর্কিত সুযোগসুবিধাগুলি, সাফল্যের হার ইত্যাদি সম্পর্কে পরামর্শ করুন, তার পাশাপাশি বিষয়গুলি যাতে নিজেদের কাছে পরিষ্কার থাকে তার জন্যে কিডনি বিশেষজ্ঞের মতামতটিও যাচাই করে দেখুন।

২. পরিবার এবং রোগী ট্রান্সপ্লান্টের  সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরের বিষয়টি হ'ল রোগীর পরিবার থেকে একজন কিডনি দাতার সংগ্রহ করা এবং দাতার সহিত রোগীর রক্তের সম্পর্ক হওয়া একান্ত জরুরি এর কারণ হ'ল পরিবারের সদস্য যিনি দাতা তার  (রক্তের সম্পর্ক) এবং ক্রস ম্যাচের ফলাফল ঠিক না থাকলে   কিডনি প্রত্যাখ্যানের সম্ভাবনা থাকে এবং  বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা এটা নিশ্চিত হয়ে নেবো যে, রোগীর সাথে দাতার সম্পর্ক কেমন এবং তাদের কোনো  আর্থিক সমস্যা আছে কিনা এই জাতীয় কোনও সমস্যা থেকে থাকলে সেটি  অবৈধ বলে গণ্য করা হবে ।

৩. এরপরে দাতা পরিবারের সদস্য অর্থাৎ (রোগী) এর কাছে দান করতে ইচ্ছুক হইলে, তখন থেকেই গ্রহীতা এবং দাতার চিকিত্সা শুরু করা  হয়। প্রথম পদক্ষেপটি হ'ল এইচএলএ (হিউম্যান লিউসোসাইট অ্যান্টিজেন) টাইপিং এবং ক্রস ম্যাচের প্রতিবেদন জন্য।
এইচএলএ টাইপিং এবং ক্রস ম্যাচের পরীক্ষা এটা দেখার জন্যে করা হয় যে, দাতার  কিডনি রোগীর শরীরের জন্যে গ্রহণযোগ্য নাকি প্রত্যাখ্যান হওয়ার সম্ভবনা আছে তা নিশ্চিত করা হয়।

৪.  এইচএলএ টাইংয়ের রিপোর্ট এবং ক্রস ম্যাচটি নিশ্চিত হওয়ার পরেই , দাতা এবং গ্রহীতার  সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা গুলি (যেমন, প্রস্রাব, রক্ত, ইসিজি, এক্স- রে ) ইত্যাদি সমস্ত পরীক্ষা গুলি করানো হয়।

৫. এইচএলএ টাইপিং এবং ক্রস ম্যাচের রিপোর্ট ঠিক থাকলে, কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি পাওয়ার জন্য একটি  আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগোতে হয় । এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি একটি অনুমোদন কমিটির মাধ্যমে করা হয়। এখানে উল্লেখ করা জরুরী যে প্রতিটি হাসপাতালে এক বছরে 25 টিরও বেশি প্রতিস্থাপন করলে হাসপাতাল ভিত্তিক বা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অনুমোদন কমিটি করা উচিত। হাসপাতাল ভিত্তিক, রাজ্য স্তরের অনুমোদনের কমিটি সংস্থাগুলি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেখানে সরকারী কর্মকর্তা, প্রতিস্থাপন হাসপাতালের প্রতিনিধি, রোগীর প্রতিনিধির পাশাপাশি দাতার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও রেকর্ডের মাধ্যমে করা হয়। রোগী যদি উপযুক্ত দাতা এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি নিয়ে ভারতে আসে তবেই  প্রাথমিক প্রক্রিয়াটি অর্থাৎ  দাতা এবং গ্রহীতার সমস্ত প্রতিবেদন গুলি , যেমন কোনও অন্তর্নিহিত সংক্রমণ বা হৃদরোগ, বা যক্ষ্মা বা হেপাটাইটিস আছে কিনা এই  বিষয়টি যাচাই করা হয়। গ্রহীতা এবং দাতার সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্য সমস্ত নথিগুলি যথাযথভাবে রাখা দরকার। সমস্ত  প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন / ফাইলের পাশাপাশি দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ককে যাচাই করে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারির অনুমোদন করে।

৬) এরপরে, নির্ধারিত ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারির একটা তারিখ রোগীর পরিবারকে দেওয়া হবে। এটি নিশ্চিত হয়ে গেলে, গ্রহীতা এবং দাতা উভয়কেই ট্রান্সপালটের  2 - 3 দিন আগে  ভর্তি করানো হয়। একবার সফল ভাবে ট্রান্সপ্লান্ট সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, উভয়ই স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। সাধারণত ট্রান্সপ্লান্টের জন্য 3-4 ঘন্টা সময় নেওয়া হয় এবং সার্জারি সম্পূর্ণ হওয়ার পর, গ্রহীতা এবং দাতা উভয়ইকেই  আইসিইউ / সিসিইউতে রাখা হয়।

৭) দাতা ৩-৪ দিনের মধ্যে ডিসচার্জ হয়ে যেতে পারে তবে গ্রহীতা সাধারণত প্রায় ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় নেন। যদি রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, তবে  সার্জারির  পরে  স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসতে প্রায় 4-6 সপ্তাহ সময় লাগে। যাইহোক, এরপর এটি নোট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে রোগী অর্থাৎ গ্রহীতাকে আজীবন সতর্কতা এবং ওষুধ সেবন করে যেতে হবে।

সাধারণত, কিডনি যেটা  দান করা হচ্ছে তার জীবনকাল 12 বছর, তবে যদি রোগী কঠোরভাবে নিয়মগুলি মেনে চলে এবং কঠোর জীবনযাত্রার শৃঙ্খলা অনুসরণ করে তবে দান করা অঙ্গটি 20 বছর পর্যন্তও কাজ করতে পারে। কড়া কথায় বলতে গেলে, প্রায় 40 বছর, 50 বছর এবং 60 বছরেরও বেশি বয়সী রোগী যথাক্রমে 22, 16 এবং 12 বছরের কাছাকাছি আয়ু আশা করতে পারেন।


প্র: কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে কোন ডায়েট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?

কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের জন্য প্রস্তাবিত ডায়েটে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে টাটকা শাকসবজি এবং ফলমূল অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে যাতে ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে । ডায়েটে  মাংস, মাছ, হাঁস-মুরগি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এতে কম লবণ এবং কম ফ্যাট থাকা উচিত। এ ছাড়া দুগ্ধ গ্রহণের মাধ্যমে জলীয়করণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল এবং পর্যাপ্ত ফসফরাস এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে হবে।

প্র: সাধারণ রুটিনে ক্রিয়াকলাপগুলি করলে রোগী কী শারীরিক ভাবে ফিট হতে পারে?
হ্যাঁ, যদি রোগী একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন বজায় রাখেন যার মধ্যে রয়েছে পুষ্টি এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং করণীয় যা সেগুলি করা এবং নিষিদ্ধ যা, সেগুলি না করা তাহলে  একেবারেই কোনও সমস্যা নেই এবং রোগী একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। 

কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির আনুমানিক খরচ কত ?

এটি হাসপাতাল এবং শহরে করানো হবে তার উপর নির্ভর করছে। সাধারণত মেট্রোপলিটন শহরগুলির ৫ - ৭ স্টার হাসপাতালগুলির তুলনায়, ৩-৪ ষ্টার  হাসপাতাল গুলিতে তুলনামূলক ভাবে খরচ কম হয় তবে সাধারণত ব্যয় হতে পারে ৫ থেকে ৭  লক্ষের মধ্যে, যেখানে শুধু সার্জারি প্রায় 2.5 থেকে 3.5 লাখ, এছাড়া দুটো ইমানু -সাপ্রেশন ইনজেকশনগুলির জন্য খরচ কমপক্ষে ১.৫ লক্ষ  এবং এইচএলএ টাইং এবং ডিএনএ  পরীক্ষা (~ 40,000) মতন খরচ হয়ে থাকে এছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি, ওষুধ ইত্যাদির মতো অন্যান্য খরচ আছে।

 সার্জারির  পরে যত্ন নেওয়ায় এক মাসের জন্য 15,000 টাকা এবং ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধের জন্য আরও 10,000 টাকা  খরচ হতে পারে।

        ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনের সাফল্যের হার কি রকম?
কিডনি প্রতিস্থাপনের বর্তমান সাফল্যের হার প্রায় 90%

   আমার নতুন প্রতিস্থাপন করা কিডনি কি সার্জারির পরপরই কাজ শুরু করবে?

এর সব কিছুই দাতা এবং গ্রহীতার শরীরের মধ্যে সমকক্ষতা কতটা ভাল তার উপর নির্ভর করে। প্রতিস্থাপন কিডনিটি সার্জারির  পরে একই দিনে কাজ শুরু করতে পারে আবার সম্পূর্ণরূপে কাজ শুরু করার আগে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন